শাল্লায় ধানের পাশাপাশি গোখাদ্য খড়ের বাম্পার উৎপাদন

- আপডেট সময় : ০২:০৮:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩ ২৭ বার পড়া হয়েছে
এবারের মতো আমার জীবনে এত সুন্দর বৈশাখ দেখিনি । যেমন ধান তেমনি রোদ। বাম্পার ফলন ও হয়েছে। প্রখর রোদ ও ধান কাটার মেশিন থাকায় একই দিনে ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো সহ ধান গোলায় উঠানো সম্ভব হয়েছে। এমন বৈশাখ হলে এবং ধানের দর টিক থাকলে কৃষি কাজে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। উক্ত কথাগুলো বলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের সহদেবপাশা গ্রামের কৃষক মোঃ জামাল মোল্লা।
এমন সময় পাশে থাকা হবিবপুর ইউনিয়নের সুনামধন্য কৃষক বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, আরে ভাই শুধু ধানের কথা বলছেন আর গো-খাদ্য খড়ের কথাটা বলা জরুরি। সবাই খালী কয় বাম্পার ধান অইছে আমি বলি বাম্পার ধান অইছে খেড় (খড়) ও বাম্পার অইছে। এবার ধানের পাশাপাশি গো-খাদ্য ও লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদিত হয়েছেন। একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কৃষক ফখরুল মিয়া বলেন,
মানুষের ক্ষিধা লাগলে যে কোনো ভাবে তার ক্ষিধা মিটিয়ে নিতে পারে। অন্য কাউকে বলতে পারে। কাজ কাম করতে পারে। কিন্তু গরুর ক্ষিধা লাগলে খাবার না পেলে সে কিছুই বলতে পারে না। তার খাবার আমাদের খাবারের আগে মজুদ রাখতে হয়।’আটগাও
ইউনিয়নের মামুদনগর গ্রামের বড় কৃষক হাবিবুর রহমান বললেন, ‘বন্যার কারণে গত বছর খড় তুলতে পারি নাই। খুব কষ্ট হয়েছে গরু পালতে। শেষে এক হাজার টাকা মন দরে খড় কিনে গরুকে কোনোমতে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখছি। এবছর আল্লাহ আমাদের বাম্পার ফলন দিছেন, সাথে খড়ও দিছেন। গ্রামের সবাই ধানের সাথে খড় ও তুলতে পেরেছে।’
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে সোনালী ধান গোলায় আর খড়ের লাইছ ও সময়মত তুলেছেন কৃষকগন। ইতোমধ্যে শাল্লার ৬ টি হাওরের শতভাগ ধান কাটাও খেড়ের লাইছ ( ডেরা) সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক বছর পর শঙ্কাহীনভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরো ধান উত্তোলন করেছেন শাল্লা উপজেলা সহ জেলার পৌঁনে চার লাখ কৃষক। এর আগে কৃষক এমন সোনার বৈশাখ দেখেননি। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় ধান শুকানো শেষ করে গৃহপালিত পশুর প্রধান খাদ্য খড় শুকিয়ে লাইছের কাজ ও শেষ করা হয়েছে। কাঁচা ঘাস কম উৎপাদন হওয়ায় শুকনো খড়ের উপর লক্ষাধীক গরু মহিষ ছাগল ভেড়ার খাদ্য উৎপাদন হয়েছে। মানুষের জন্য যেমন ধান প্রয়োজন, গবাদিপশুর জন্য তেমনি প্রয়োজন খড়।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব বললেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সত্যি বাম্পার বোরো ফসল হয়েছে। সময়মতো সকল ধান ও খড় বাড়িতে উটানো হয়েছে। এলাকার কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। সুন্দর সুবৈশাখ কেবল আল্লাহর মেহেরবানীতে হয়েছে বলে জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বললেন, সুনামগঞ্জ জেলায় সাত লক্ষ ৬০ হাজারের উপর গরু-মহিষ রয়েছে। হাওর অধ্যুষিত এই জেলা বছরের অর্ধেক সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে, তাই এখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায়। যার কারণে এখানে শুকনো খড় প্রধান গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এই বছর বোরো মৌসুমে দুই লক্ষ মে.টন খড় উৎপাদন হয়েছে। যা জেলার গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।