কক্সবাজার কল্লোল হোটেল ভবনে ১ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ দায়ের

- আপডেট সময় : ১২:১৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের লাবনী সী বিচ পয়েন্টে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হোটেল কল্লোল ভবনের কাঠামো ভাংচুর ও অন্তত ১ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। কল্লোল হোটেলটির স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইদ্রিস আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত অফিস কক্ষও ভেঙে খাবার হোটেল বানানোর অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে অস্থায়ী ভাড়াটিয়া।
এধরনের কাজ থেকে বিরত রাখার চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ১২ এপ্রিল পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন অংশীদাররা। ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, কক্সবাজার লাবনী সী বীচ পয়েন্টের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হোটেল কল্লোল। এটির স্বত্বাধিকারী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আহমেদ।
তার মৃত্যু পর অংশীদার হন মেয়ে হোসনে আরা আরজু, হাসিনা আকতার, মোহছেনা আকতার বকুল ও ছেলে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। তারা গত ৯/১০/২০১৮ ইমরান হাসানকে হোটেল কল্লোল সম্পূর্ণ চলমান আধুনিক ফিটিংস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সম্পূর্ণ ফার্নিসড ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত স্বয়ংসম্পূর্ণ হোটেল (নির্দিষ্ট অংশ ব্যতীত) নির্দিষ্ট শর্তে অস্থায়ী চুক্তিপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ী ভাবে ভাড়া নেয়।
ভাড়ার পর থেকে ইমরান হাসান বিভিন্ন ভাবে হোটেলটির ক্ষতি সাধন করে আসছে। হোটেল কল্লোলের অংশীদার হোসনে আরা আরজু বলেন, গত ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতের আধাঁরে হোটেল কল্লোলের ভাড়াটিয়া ইমরান হাসান তার কু-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার কর্মচারীদের দিয়ে চুক্তির ১০ নং শর্ত ভঙ্গ করে আমাদের অজান্তে হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের নকশা অনুযায়ী নির্মিত আধুনিক ফিটিংস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সম্পূর্ণ ফার্নিসড ১২ টি কক্ষ ভেঙে ফেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি সহ হোটেল ভবনটির বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করে।
পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে আমরা মালিকগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাড়াটিয়া ইমরান হাসানের সাথে যোগাযোগ করেন এবং চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কথা উল্লেখ করে হোটেল ভবনের কক্ষ ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তাদের সাথে উল্টো দুর্ব্যবহার এবং প্রাণ নাশ সহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর নানা ধরনের হুমকি দেন।
অংশীদার হোসনে আরা আরজু বলেন, ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ইমরান হাসান চুক্তিপত্রের বিভিন্ন শর্ত ভঙ্গ করে অসৎ উদ্দেশ্যে সঠিক সময়ে জামানতের টাকা পরিশোধ না করা, মাসিক ভাড়া বকেয়া রাখা, ভাড়া চুক্তির শর্ত বহির্ভূত সংস্কারের নামে মূল হোটেল ভবনের কাঠামো ভাংচুরের মাধ্যমে হোটেল ভবনের ক্ষতিসহ আর্থিক ক্ষতি করা এবং আইন অমান্য সহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে হোটেল মালিকপক্ষের বিপুল আর্থিক ক্ষতি সাধনসহ সুনাম ক্ষুন্ন করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে বললে এবং ভাড়াকৃত হোটেল ভবনে ভাংচুরের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন হতে বিরত থাকতে বললে ভাড়াটিয়া ইমরান হাসান এবং তার অনুগত কর্মচারীরা উল্টো মালিকপক্ষকে প্রাণ নাশের হুমকি-ধামকি, বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, অশোভন আচরণসহ নানা ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করছে।
তিনি আরও জানান, স্বয়ংসম্পূর্ণ ফার্নিসড হোটেলের মালামাল আমাদের অজান্তে লুট করে নিয়ে যাওয়ায় গত ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভাড়াটিয়া ইমরান হাসানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ভাড়াকৃত হোটেলের জামানত ও ভাড়া পরিশোধে ভাড়াটিয়া ইমরান হাসান কর্তৃক প্রতারণামূলক ভুয়া চেক প্রদান করায় তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা (সিআর মামলা নং-১১৫৩/২০১৯) চলমান।
কল্লোল হোটেল অংশীদার হাসিনা আক্তার রিটা ও মোহসিনা আক্তার বকুল বলেন, তিল তিল করে সাগরপাড়ে হোটেলটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইদ্রিস আহমেদ। হোটেল ভাড়া দেয়ার মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের। আমার বাবার স্মৃতি বিজড়িত অফিস কক্ষ ভেঙে খাবার হোটেল করা চুক্তি মোতাবেক আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ।
আমরা ভাড়াটিয়া এমডি ইমরান হাসানের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। হোটেল কল্লোল ভাড়াটিয়া ইমরান হাসানের বিরুদ্ধে ভাড়া চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গ, হোটেল ভবনের নিচতলায় ১২ টি কক্ষ ভাংচুরের মাধ্যমে ভবনের ১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসহ প্রাণ নাশ সহ হুমকির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অংশীদাররা ১২ এপ্রিল কক্সবাজার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান পিপিএম বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তিনি সদর মডেল থানার ওসি শেখ মনির উল গীয়াসকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে ঘটনাস্থল কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ টিম পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।