ঢাকা ০১:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ ::
ইউস্যাফের ঈদ আয়োজন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বরকামতা ইউনিয়নবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানালেন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগ নেতা কালীপদ মজুমদারের অর্থায়নে ঈদ সামগ্রী বিতরণ সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংঘর্ষে ২ জন নিহত আহত ২০ একজন গ্রেফতার ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এড. রফিকুল আলম চৌধুরী  ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সুমন ছাতকে খালের পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ বিক্রি করবো এমন বাবার মেয়ে আমি না : প্রধানমন্ত্রী ঈদুল আযহার অগ্রীম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল ঈদুল আযহার অগ্রীম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জিএস সুমন সরকার

লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫২ বার পড়া হয়েছে

লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীরা

দেশের সময়২৪ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সোহাগ হাসান,সিরাজগঞ্জ || মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীদের। একারনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক খামার।

গত ৬ মাস আগে লেয়ার মুরগীর খাদ্য বস্তা প্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকা ছিলো। এখন সেই খাদ্য ২৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎতের লোডশেডিং এর কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে। বেশি দামে ডিম বিক্রি করে মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রান্তিক খামারীরা লোকসান গুনছেন। এজন্য প্রান্তিক খামারীরা ধংসের মুখে। ব্যবসায়ীদের দাবী সরকারী ভাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধারন করা হলে খামারীরা লাভবান হবে।

তাহলে পোল্ট্রি শিল্প টিকে থাকবে। এবিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, খামারীদের লাভবান করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডিম ও মুরগীর দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে গেলে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। আবার মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারীদের খামার টিকে রাখা কঠিন হয়। সমন্বয় করে ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারন করলে সবাই উপক্রিত হবে।

সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতি সুত্রে জানায়ায়, জেলার ৮০র দশকের শুরুতে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। বিভিন্ন সময় চড়াই-উপড়ায়ের মধ্য দিয়ে এখানে গড়ে উঠে প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামার। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ডফ্লু এবং বন্যার কারনে সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫ হাজার খামারের মধ্যে অর্ধেক বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু এবং বন্যায় সব কিছু হয়ে যায় লন্ড ভন্ড। এখন এলাকার পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের দোর গোড়ায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া খামার এখন মানুষের বসবাস। বর্তমানে মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারীদের।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) সাকলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়া গ্রামের খামারী সেলিম রেজা বলেন, আমার খামারের অবস্থা ভালোই ছিলো কিন্তু এখন ভালো না। খামারে বাচ্চা উঠিয়েছিলাম ৪ হাজার ২৫০ পিচ। এখন খামারে আছে ২ হাজার পিচ। এর কারন হচ্ছে বিভিন্ন রোগব্যধী। রানীখেত, টাইফয়েট, কলেরায় মুরগী মারা যাচ্ছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ না থাকার কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে। যে দিন গরম বেশি থাকে বিদ্যুৎ থাকে না মে দিন গড়ে ৩০-৪০ টি মুরগী মারা যায়। এই মারা যাওয়ার কারনে খামারে ৪ হাজার ২৫০ পিচ মুরগীর মধ্যে এখন ২ হাজার মুরগী আছে। খামারীরা সার্বিক ভাবে লোকসানে আছে। এর মূল কারন খাদ্যের দাম বেশি। আগে আমরা ৬টাকা করে ডিম বিক্রি করেছি তখন প্রতিডিমে ১ থেকে দেড় টাকা লাভ হয়েছে। এখন ৯টাকা করে ডিম বিক্রি করলেও আমাদের লাভ থাকে না।

এই লাভ না থাকার কারনটা হচ্ছে গত বছর যে খাদ্যের দাম ছিলো ১হাজার ৮শ টাকা এখন সেই খাদ্যের দাম ৩ হাজার টাকা। খাদ্য খেয়েই ডিম দেয়। খাদ্য ছাড়া তো ডিম দেয় না। মুরগী উৎপাদনের মূল উপাদান হচ্ছে খাদ্য। সুতরাং খাদ্যের দাম বাড়লেতো ডিমের দাম বাড়বে। এজন্য খামারীরা ভালো নেই। সরকারের কাছে দাবী জানায় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধার করা হোক। তাহলে খামারীরা লাভবান হবে। খামার টিকে থাকবে।

সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের হরিনাহাটা গ্রামের খামারী জাবালা মোস্তাক বলেন, বর্তমানে খামারীরা খুবই দুরবস্তার মধ্যে রয়েছে। করোনাকালী সময় থেকে খামারীরা দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। আমার খামারে ৮ হাজার মুরগী ছিলো। প্রতিকুলতার কারনে খাদ্যের দাম বেশি ডিমের দাম কম। যে কারনে আমার খামারের একটি সেট খালি পড়ে আছে।

লোডশেডিং একারনে সময় মত বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারনে অনেক মুরগী স্টোক করে মারা যাচ্ছে। আবার যখন বিদ্যুৎ থাকে না তখন জেনারেটর ব্যবহার করে মুরগীকে গরমের হাত থেকে রক্ষা করবো তাও সম্ভব হচ্ছে না। এর মূল কারন হচ্ছে ডিজেলের দাম বেশি। মুরগীর বাচ্চা থেকে ডিম উৎপাদন পর্যন্ত যে পরিমান খরচ হচ্ছে তাতে খামারীদের লোকসান হচ্ছে। খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।

সদর উপজেলার শিয়ালকোল এলাকার খামারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। ডিম উৎপাদনের যে খরচ সে অনুযায়ী আমরা ডিমের দাম পাচ্ছি না। প্রতিটি ডিমের পেছনে ৯টাকা খরচ পড়ে যায়। আর ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৮টাকা ৭০-৮০ পয়সা।

আমাদের মাঝে যে ব্যবসায়ীরা আছেন তারা ১০-১২ টাকায় ডিম বিক্রি করছেন। এতে মধ্যসত্তভোগী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রান্তিক খামারীরা লোকসান গুনছেন। এজন্য প্রান্তিক খামারীরা ধংসের মুখে। এজন্য সরকারী ভাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০টাকা করে মূল্য নির্ধারন করা প্রয়োজন। তাহলে খামারীরা বাঁচতে পারবে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর পদকপ্রাপ্ত খামারি মাহফুজ উর রহমান বলেন, ১ হাজার লেয়ার বাচ্চা ডিম পাড়া পর্যন্ত (৫ মাস) বিনিয়োগ করতে হয় (বর্তমান বাজার মূল্য) ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রথমে ঘর তৈরীতে খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা, খাচা তৈরীতে খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এর পর ১ হাজার লেয়ার বাচ্চা কিনতে হয়। যার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। মেডিসন ও ভ্যাকসিনে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা, ৫ জন কর্মচারীর বেতন ৫০ হাজার টাকা, ৫ মাসে মুরগী খাদ্য খাওয়া বাবদ খরচ ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল ১০ হাজার টাকা।

এর পর শুরু হয় ডিম উৎপাদন। প্রতিদিন একটি মুরগী খাদ্য খাবে ১২০ গ্রাম। তাকে ডিম উৎপাদন প্রথম দিন থেকে ১ হাজার মুরগী প্রতিদিন খাদ্য খাবে ১২০ কেজি।

এই ১২০ কেজি খাদ্যের দাম (বর্তমান বাজার মূল্য) ৬ হাজার ২৪০ টাকা। প্রতিদিন কর্মচারী বেতম বাবদ খরচ ৩৩৩ টাকা। প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিল ১০০ টাকা। প্রতিদিন মেডিসিন বাবদ খরচ ২৮০ টাকা। প্রতিদিন মোট খরচ হয় ৬ হাজার ৯৫৩ টাকা।

এবার ১ হাজার মুরগী গড়ে ৮৫০টি ডিম পাড়বে। ৮৫০ টি ডিমের দাম ৭ হাজার ৬৫০ টাকা। তাতে ১ হাজার মুরগী ডিম বিক্রি করে আয় হয় ৭ হাজার ৬৫০ টাকা। আর উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬ হাজার ৯৫৩ টাকা। ১ হাজার মুরগীর খামারে প্রতিদিন লাভ হয় ৬৯৭ টাকা। এটি প্রতিটি ডিম ৯টা করে বিক্রি করলে লাভ হবে।

তবে ৯টার নিচে ডিমের দাম চলে আসলে খামারীদের লোকসান গুনতে হবে। তবে যে হারে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাকে খামারীদের লোকসানে পড়তে হবে। এজন্য তারা সরকারের কাছে প্রতিনিটি ডিমের মূল্য ১০ টাকা নির্ধারনের জন্য দাবী জানিয়েছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাংগ কুমার তালুকদার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারপরও সরকার বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে খাদ্যের দাম নাগালে রাখতে। আমরাও চেষ্টা করছি। খামারীদের লাভবান করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডিম ও মুরগীর দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে গেলে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। আবার মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারীদের খামার টিকে রাখা কঠিন হয়। সমন্বয় করে ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারন করলে সবাই উপক্রিত হবে। কেউ যেন বেশি লাভবান না হয় আবার কেউ যেন বেশি ক্ষতিগ্রন্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

খামারী যদি নির্দিষ্ট দামে বাচ্চা ও খাদ্য পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। উৎপাদন খরচ কম হলে খামারীরা টিকে থাকবে ভোক্তাও কম দামে খাদ্য পাবে। মধ্যস্বত্তভোগীদের জন্য খামারী ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারনে অকারনে দাম বৃদ্ধি করতে চায় মধ্যস্বত্তভোগীরা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীরা

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

সোহাগ হাসান,সিরাজগঞ্জ || মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীদের। একারনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক খামার।

গত ৬ মাস আগে লেয়ার মুরগীর খাদ্য বস্তা প্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকা ছিলো। এখন সেই খাদ্য ২৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎতের লোডশেডিং এর কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে। বেশি দামে ডিম বিক্রি করে মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রান্তিক খামারীরা লোকসান গুনছেন। এজন্য প্রান্তিক খামারীরা ধংসের মুখে। ব্যবসায়ীদের দাবী সরকারী ভাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধারন করা হলে খামারীরা লাভবান হবে।

তাহলে পোল্ট্রি শিল্প টিকে থাকবে। এবিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, খামারীদের লাভবান করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডিম ও মুরগীর দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে গেলে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। আবার মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারীদের খামার টিকে রাখা কঠিন হয়। সমন্বয় করে ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারন করলে সবাই উপক্রিত হবে।

সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতি সুত্রে জানায়ায়, জেলার ৮০র দশকের শুরুতে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। বিভিন্ন সময় চড়াই-উপড়ায়ের মধ্য দিয়ে এখানে গড়ে উঠে প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামার। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ডফ্লু এবং বন্যার কারনে সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫ হাজার খামারের মধ্যে অর্ধেক বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু এবং বন্যায় সব কিছু হয়ে যায় লন্ড ভন্ড। এখন এলাকার পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের দোর গোড়ায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া খামার এখন মানুষের বসবাস। বর্তমানে মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারীদের।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) সাকলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়া গ্রামের খামারী সেলিম রেজা বলেন, আমার খামারের অবস্থা ভালোই ছিলো কিন্তু এখন ভালো না। খামারে বাচ্চা উঠিয়েছিলাম ৪ হাজার ২৫০ পিচ। এখন খামারে আছে ২ হাজার পিচ। এর কারন হচ্ছে বিভিন্ন রোগব্যধী। রানীখেত, টাইফয়েট, কলেরায় মুরগী মারা যাচ্ছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ না থাকার কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে। যে দিন গরম বেশি থাকে বিদ্যুৎ থাকে না মে দিন গড়ে ৩০-৪০ টি মুরগী মারা যায়। এই মারা যাওয়ার কারনে খামারে ৪ হাজার ২৫০ পিচ মুরগীর মধ্যে এখন ২ হাজার মুরগী আছে। খামারীরা সার্বিক ভাবে লোকসানে আছে। এর মূল কারন খাদ্যের দাম বেশি। আগে আমরা ৬টাকা করে ডিম বিক্রি করেছি তখন প্রতিডিমে ১ থেকে দেড় টাকা লাভ হয়েছে। এখন ৯টাকা করে ডিম বিক্রি করলেও আমাদের লাভ থাকে না।

এই লাভ না থাকার কারনটা হচ্ছে গত বছর যে খাদ্যের দাম ছিলো ১হাজার ৮শ টাকা এখন সেই খাদ্যের দাম ৩ হাজার টাকা। খাদ্য খেয়েই ডিম দেয়। খাদ্য ছাড়া তো ডিম দেয় না। মুরগী উৎপাদনের মূল উপাদান হচ্ছে খাদ্য। সুতরাং খাদ্যের দাম বাড়লেতো ডিমের দাম বাড়বে। এজন্য খামারীরা ভালো নেই। সরকারের কাছে দাবী জানায় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধার করা হোক। তাহলে খামারীরা লাভবান হবে। খামার টিকে থাকবে।

সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের হরিনাহাটা গ্রামের খামারী জাবালা মোস্তাক বলেন, বর্তমানে খামারীরা খুবই দুরবস্তার মধ্যে রয়েছে। করোনাকালী সময় থেকে খামারীরা দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। আমার খামারে ৮ হাজার মুরগী ছিলো। প্রতিকুলতার কারনে খাদ্যের দাম বেশি ডিমের দাম কম। যে কারনে আমার খামারের একটি সেট খালি পড়ে আছে।

লোডশেডিং একারনে সময় মত বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারনে অনেক মুরগী স্টোক করে মারা যাচ্ছে। আবার যখন বিদ্যুৎ থাকে না তখন জেনারেটর ব্যবহার করে মুরগীকে গরমের হাত থেকে রক্ষা করবো তাও সম্ভব হচ্ছে না। এর মূল কারন হচ্ছে ডিজেলের দাম বেশি। মুরগীর বাচ্চা থেকে ডিম উৎপাদন পর্যন্ত যে পরিমান খরচ হচ্ছে তাতে খামারীদের লোকসান হচ্ছে। খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।

সদর উপজেলার শিয়ালকোল এলাকার খামারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। ডিম উৎপাদনের যে খরচ সে অনুযায়ী আমরা ডিমের দাম পাচ্ছি না। প্রতিটি ডিমের পেছনে ৯টাকা খরচ পড়ে যায়। আর ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৮টাকা ৭০-৮০ পয়সা।

আমাদের মাঝে যে ব্যবসায়ীরা আছেন তারা ১০-১২ টাকায় ডিম বিক্রি করছেন। এতে মধ্যসত্তভোগী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রান্তিক খামারীরা লোকসান গুনছেন। এজন্য প্রান্তিক খামারীরা ধংসের মুখে। এজন্য সরকারী ভাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০টাকা করে মূল্য নির্ধারন করা প্রয়োজন। তাহলে খামারীরা বাঁচতে পারবে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর পদকপ্রাপ্ত খামারি মাহফুজ উর রহমান বলেন, ১ হাজার লেয়ার বাচ্চা ডিম পাড়া পর্যন্ত (৫ মাস) বিনিয়োগ করতে হয় (বর্তমান বাজার মূল্য) ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রথমে ঘর তৈরীতে খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা, খাচা তৈরীতে খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এর পর ১ হাজার লেয়ার বাচ্চা কিনতে হয়। যার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। মেডিসন ও ভ্যাকসিনে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা, ৫ জন কর্মচারীর বেতন ৫০ হাজার টাকা, ৫ মাসে মুরগী খাদ্য খাওয়া বাবদ খরচ ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল ১০ হাজার টাকা।

এর পর শুরু হয় ডিম উৎপাদন। প্রতিদিন একটি মুরগী খাদ্য খাবে ১২০ গ্রাম। তাকে ডিম উৎপাদন প্রথম দিন থেকে ১ হাজার মুরগী প্রতিদিন খাদ্য খাবে ১২০ কেজি।

এই ১২০ কেজি খাদ্যের দাম (বর্তমান বাজার মূল্য) ৬ হাজার ২৪০ টাকা। প্রতিদিন কর্মচারী বেতম বাবদ খরচ ৩৩৩ টাকা। প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিল ১০০ টাকা। প্রতিদিন মেডিসিন বাবদ খরচ ২৮০ টাকা। প্রতিদিন মোট খরচ হয় ৬ হাজার ৯৫৩ টাকা।

এবার ১ হাজার মুরগী গড়ে ৮৫০টি ডিম পাড়বে। ৮৫০ টি ডিমের দাম ৭ হাজার ৬৫০ টাকা। তাতে ১ হাজার মুরগী ডিম বিক্রি করে আয় হয় ৭ হাজার ৬৫০ টাকা। আর উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬ হাজার ৯৫৩ টাকা। ১ হাজার মুরগীর খামারে প্রতিদিন লাভ হয় ৬৯৭ টাকা। এটি প্রতিটি ডিম ৯টা করে বিক্রি করলে লাভ হবে।

তবে ৯টার নিচে ডিমের দাম চলে আসলে খামারীদের লোকসান গুনতে হবে। তবে যে হারে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাকে খামারীদের লোকসানে পড়তে হবে। এজন্য তারা সরকারের কাছে প্রতিনিটি ডিমের মূল্য ১০ টাকা নির্ধারনের জন্য দাবী জানিয়েছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাংগ কুমার তালুকদার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারপরও সরকার বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে খাদ্যের দাম নাগালে রাখতে। আমরাও চেষ্টা করছি। খামারীদের লাভবান করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডিম ও মুরগীর দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে গেলে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। আবার মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারীদের খামার টিকে রাখা কঠিন হয়। সমন্বয় করে ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারন করলে সবাই উপক্রিত হবে। কেউ যেন বেশি লাভবান না হয় আবার কেউ যেন বেশি ক্ষতিগ্রন্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

খামারী যদি নির্দিষ্ট দামে বাচ্চা ও খাদ্য পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। উৎপাদন খরচ কম হলে খামারীরা টিকে থাকবে ভোক্তাও কম দামে খাদ্য পাবে। মধ্যস্বত্তভোগীদের জন্য খামারী ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারনে অকারনে দাম বৃদ্ধি করতে চায় মধ্যস্বত্তভোগীরা।